Powered by Blogger.

Tuesday, December 25, 2012

নজরুল গীতি

অরুণকান্তি কেগো যোগী ভিখারী

 

অরুণকান্তি কেগো যোগী ভিখারী।  

নীরবে হেসে দাঁড়াইলে এসে

প্রখর তেজ তব নেহারিতে নারি।।

রাস-বিলাসিনী আমি আহিরিণী

শ্যামল-কিশোর-রূপ শুধু চিনি

অম্বরে হেরি আজ একি জ্যোতি-পুঞ্জ?

হে গিরিজাপতি! কোথা গিরিধারী।।

সম্বর সম্বর মহিমা তব

হে ব্রজেশ ভৈরব! আমি ব্রজবালা,

হে শিব সুন্দর! বাঘছাল পরিহর-

ধর নটবর বেশ পর নীপমালা।

নব-মেঘ-চন্দনে ঢাকি’ অঙ্গগজ্যোতি

প্রিয় হ’য়ে দেখা দাও ত্রিভুবন-পতি,

পার্ব্বতী নহি আমি, আমি শ্রীমতী,

বিষাণ ফেলিয়া হও বাঁশরী-ধারী।।

————–

আহীর ভৈরব / ত্রিতাল



আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া



আজো কাঁদে কাননে কোয়েলিয়া।

চম্পা কুঞ্জে আজি গুঞ্জে ভ্রমরা-কুহরিছে পাপিয়া।।

প্রেম-কুসুম শুকাইয়া গেল হায়!

প্রাণ-প্রদীপ মোর হের গো নিভিয়া যায়,

বিরহী এসে ফিরিয়া।।

তোমারি পথ চাহি হে প্রিয় নিশিদিন

মালার ফুল মোর ধুলায় হ’ল মলিন

জনম গেল ঝুরিয়া।।

————–

 হাস্বৗর-ত্রিতাল



আমার গানের মালা

 

আমার গানের মালা
আমি করব কারে দান।
মালার ফুলে জড়িয়ে আছে
করুণ অভিমান।
মালা করব কারে দান।।
চোখে মলিন কাজল রেখা
কন্ঠে কাঁদে কুহু কেকা।
কপোলে যার অশ্রু রেখা
একা যাহার প্রাণ।।
শাঁখায় ছিল কাঁটার বেদন
মালায় শুচির জ্বালা।
কন্ঠে দিতে সাহস না পাই
অভিশাপের মালা।
বিরহে যার প্রেমারতি
আঁধার লোকের অরুণধুতি।
নাম না জানা সেই তপোতী
তার তরে এই গান।।   

 

কারার ঐ লৌহকপাট

 

কারার ঐ লৌহকপাট,
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান,
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।

 

গাজনের বাজনা বাজা,
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্যকে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি, ভগবান পরবে ফাঁসি,
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে!

 

ওরে ও পাগলা ভোলা,
দে রে দে প্রলয় দোলা,
গারদগুলা জোরসে ধরে হেচ্‌কা টানে
মার হাঁক হায়দারী হাঁক, কাধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক, মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।

 

নাচে ওই কালবোশাখী,
কাটাবী কাল বসে কি
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,
যত সব বন্দী শালায়-আগুন-জ্বালা, আগুন-জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।। 

 

ওর নিশীথ সমাধি ভাঙিও না

 

 

ওর নিশীথ সমাধি ভাঙিও না।
মরা-ফুলের সাথে ঝরিল যে ধুলিপথে
সে আর জাগিবে না, তারে ডাকিও না।।
তাপসিনী-সম তোমারি ধ্যানে
সে চেয়েছিল তব পথের পানে,
জীবনে যাহার মুছিলে না আঁখি ধার -
আজি তাহার পাশে কাঁদিও না।।
মরণের কোলে সে গভীর শান্তিতে
পড়েছে ঘুমায়ে,
তোমারি তরে গাঁথা শুক্‌নো মালিকা
বক্ষে জড়ায়ে।
যে মরিয়া জুড়ায়েছে -
ঘুমাতে দাও তারে আগিও না।।

———–
দরবারী কানাড়া / ত্রিতাল

 

এল বনান্তে পাগল বসন্ত

 

 

এল বনান্তে পাগল বসন্ত।
বনে বনে মনে মনে রং সে ছড়ায় রে, চঞ্চল তরুণ দুরন্ত।
বাঁশীতে বাজায় সে বিধুর পরজ বসন্তের সুর,
পান্ডু-কপোলে জাগে রং নব অনুরাগে
রাঙা হল ধূসর দিগন্ত।।
কিশলয়ে-পর্ণে অশান্ত ওড়ে তা’র অঞ্চল প্রাস্ত।
পলাশ-কলিতে তা’র ফুল-ধনু লঘু-ভার,
ফুলে ফুলে হাসি অফুরন্ত।
এলো মেলো দখিনা মলয় রে প্রলাপ বকিছে বনময় রে।
অকারণ মন মাঝে বিরহের বেণু বাজে।
জেগে ওঠে বেদনা ঘুমন্ত।।

——————
পরজ-বসন্ত / ত্রিতাল।

 

এই শিকল পরা ছল

 

মোদের এই শিকল পরা ছল
এই শিকল পরেই
শিকল তোদের করবো রে বিকল।।

তোদের বন্ধ কারায় আসা
মোদের বন্দী হতে নয়
ওরে ক্ষয় করতে আসা
মোদের সবার বাঁধন ভয়
এই বাঁধন পরেই বাঁধন ভয়কে
করব মোরা জয়
এই শিকল বাঁধা পা নয়
এ শিকল ভাঙ্গা কল।।

ওরে ক্রন্দন নয় বন্ধন
এই শিকল ঝন ঝনা
এ যে মুক্তি পথের অগ্রদূতের
চরণ বন্দনা।
এই লাঞ্ছিতেরাই অত্যাচারকে
হানছে লাঞ্ছনা
ওদের অস্থি দিয়েই জ্বলবে দেশে
আবার বজ্রানল। 

 

এই রাঙামাটির পথে লো

 

এই রাঙামাটির পথে লো
মাদল বাজে বাজে বাঁশের বাঁশি

ও বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো
মন লাগে না কাজে লো
রইতে নারি ঘরে আমার
প্রাণ হলো উদাসী লো

মাদলীয়ার তালে তালে
অঙ্গ ওঠে দুলে লো
দোল লাগে শাল পিয়াল বনে
নতুন খোপার ফুলে লো
মহুয়া বনে লুটিয়ে পরে
মাতাল চাঁদের হাসি লো

চোখে ভালো লাগে যাকে
তারে দেখবো পথের বাঁকে
তার চাচড় কেশে পড়িয়ে দেবো
ঝুমকো জবার ফুল লো
তার গলার মালার কুসুম কেড়ে
পড়বো কানের দুল
তার নাচের তালের ইশারাতে
বলবো ভালোবাসি লো

 

আমি পথ-মঞ্জুরী ফুটেছি আঁধার রাতে

 

আমি পথ-মঞ্জুরী ফুটেছি আঁধার রাতে,
গোপন অশ্রু-সম রাতের নয়ন-পাতে।
দেবতা চাহেনা মোরে,
গাঁথে না মালার ডোরে,
অভিমানে তাই ভোরে শুকাই শিশির-সাথে।।
মধুর সুরভি ছিল আমার পরাণ ভরা,
আমার কামনা ছিল মালা হ’য়ে ঝ’রে পড়া।
ভালবাসা পেয়ে যদি
কাঁদিতাম নিরবধি,
সে বেদনা ছিল ভাল সুখ ছিল সে কাঁদাতে।

——————–
পঠমঞ্জরী-ঢিমা ত্রিতাল

 

আমি চিরতরে দূরে চলে যাব

 

 আমি চিরতরে দূরে চলে যাব, তবু আমারে দেবনা ভুলিতে।
(আমি) বাতাস হইয়া জড়াইব কেশে, বেণী যাবে যবে খুলিতে।।
তোমার সুরের নেশায় যখন/ ঝিমাবে আকাশ কাঁদিবে পবন,
রোদন হইয়া আসিব তখন তোমার বক্ষে দুলিতে।।
আসিবে তোমার পরমোৎসবে কত প্রিয়জন কে জানে,
মনে প’ড়ে যাবে–কোন্‌ সে ভিখারী পায়নি ভিক্ষা এখানে।
তোমার কুঞ্জ-পথে যেতে, হায়! / চমকি’ থামিয়া যাবে বেদনায়
দেখিবে, কে যেন ম’রে মিশে আছে তোমার পথের ধূলিতে।

 

কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া

 

কুহু কুহু কুহু কুহু কোয়েলিয়া
কুহরিল মহুয়া বনে।
চমকি’ জাগিনু নিশীথ শয়নে।।
শূন্য-ভবনে মৃদুল সমীরে
প্রদীপের শিখা কাঁপে ধীরে ধীরে।
চরণ-চিহ্ন রাখি’ দলিত কুসুমে
চলিয়া গেছ তুমি দূরে বিজনে।।
বাহিরে ঝরে ফুল আমি বুঝি ঘরে
বেণু-বনে সমীরণ হাহাকার করে,
ব’লে যাও কেন গেলে এমন ক’রে
কিছু নাহি ব’লে সহসা গোপনে।।

———–
খাম্বাজ/ত্রিতলি

 

কেন আনো ফুলোডোর

 

কেন আনো ফুলোডোর
আজি বিদায়ও বেলা
মোছো মোছো আঁখিলোর
যোগী ভাঙ্গিলো মেলা

কেন মেঘেরো স্বপন
আনো মরূরও চোখে
ভুলে দিও না কুসুম
যারে দিয়েছো হেলা

যবে শুকালো কানন
এলে বিঁধুর পাখি
লয়ে কাঁটা ভরা প্রান
একি নিঠুরও খেলা

যদি আকাশ কুসুম
পেলি চকিতে কবি
চলো চলো মুসাফির
ডাকে পারেরও বেলা

আছে বাহুরও বাঁধন
তব শয়ন সাথি
আমি এসেছি একা
আমি চলি একেলা

কেন আনো ফুলোডোর
আজি বিদায়ও বেলা
মোছো মোছো আঁখিলোর
যোগী ভাঙ্গিলো মেলা



খেলিছ এ বিশ্বলয়ে



খেলিছ এ বিশ্বলয়ে

বিরাট শিশুর আনমনে।

প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা

নিরজনে প্রভু নিরজনে।।

শূণ্যে মহা আকাশে

তুমি মগ্ন লীলা বিলাসে

ভাঙ্গিছ গড়িছ নীতি ক্ষণে ক্ষণে

নিরজনে প্রভু নিরজনে।।

তারকা রবি শশী

খেলনা তব হে উদাসী

পড়িয়া আছে রাঙা

পায়ের কাছে রাশি রাশি।

নিত্য তুমি হে উদার

সুখে-দুখে অবিকার।

হাসিছ খেলিছ তুমি আপন সনে

নিরজনে প্রভু নিরজনে।।

 

খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে

 

 খেলিছে জলদেবী সুনীল সাগর জলে
তরঙ্গ লহর তোলে লীলায়িত কুন্তলে।।
জল ছল ঊর্মী নূপুর শ্রোতনীরে বাজে সুমধুর
জল চঞ্চল ছল কাঁকন কেউর

ঝিনুকের মেখলা কটিতে দোলে।।
আনমনে খেলে চলে বালিকা
খুলে পড়ে মুকুতা মালিকা
হরষিত পারাবারে ঊর্মী জাগে

লাজে চাঁদ লুকালো গগন তলে।।

 

খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে


খোদার প্রেমের শরাব পিয়ে বেহুঁশ হয়ে রই পড়ে
ছেড়ে মসজিদ আমার মুর্শিদ এল যে এই পথ ধরে।।
দুনিয়াদারীর শেষে আমার নামাজ বদলাতে
চাই না বেহেশত খোদার কাছে নিত্য মোনাজার ক’রে।।
কায়েস যেমন লায়লী লাগি’ লভিল মজনু খেতাব,
যেমন ফরহাদ শিরীর প্রেমে হ’ল দিওয়ানা বেতাব,
বে-খুদীতে মশগুল আমি তেম্‌ খোদার তরে।।
পুড়ে মরার ভয় না রাখে, পতঙ্গ আগুনে ধায়,
সিন্ধুতে মেটে না তৃষ্ণা চাতক বারি বিন্দু চায়,
চকোর চাহে চাঁদের সুধা, চাঁদ সে আসমানে কোথায়
সুরুয থাকে কোন্‌ সুদূরে সূর্যমুখী তারেই চায়,
তেমনি আমি চাহি খোদায়, চাহিনা হিসাব ক’রে।।

 

গানগুলি মোর আহত পাখির সম

 

গানগুলি মোর আহত পাখির সম

লুটাইয়া পড়ে তব পায় প্রিয়তম।।

বাণ বেধা মোর গানের পাখিরে

তু’লে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে,

লভিবে মরণ চরণে তোমার

সুন্দর অনুপম।।

তারা সুখের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে,

তব নয়ন শায়কে বিঁধিলে তাহাদের কবে।

মৃত্যু আহত কন্ঠে তাহার

একি এ গানের জাগিল জোয়ান,

মরণ বিষাদে অমৃতের স্বাদ

আনিলে বিষাদ মম।।

 

চল চল চল

 

চল চল চল

ঊর্দ্ধ গগনে বাজে মাদল

নিম্নে উতলা ধরণী তল

অরুণ প্রাতের তরুণ দল

চলরে চলরে চল।।

ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত

আমরা আনিব রাঙা প্রভাত

আমরা টুটিব তিমির রাত

বাঁধার বিন্ধ্যা চল।।

নব নবীনের গাহিয়া গান

সজীব করিব মহাশশ্মান

আমরা দানিব নতুন প্রাণ

বাহুতে নবীন বল।।

চলরে নওজোয়ান, শোনরে পাতিয়া কান

মৃত্যু তোরণ দুয়ারে দুয়ারে জীবনের আহ্বান

ভাঙ্গরে ভাঙ্গ আগল

চলরে চলরে চল।।


দক্ষিণ সমীরণ সাথে বাজো বেণুকা

 

দক্ষিণ সমীরণ সাথে
বাজো বেণুকা।      
মধুমাধবী সুরে চৈত্র পূর্নিমা রাতে
বাজো বেণুকা।।          
বাজো শীর্ণা-স্রোত নদী-তীরে,                          
বাজো ঘুম যবে নামে বন ঘিরে,              
যবে, ঝরে এলোমেলো বায়ে ধীরে,                     
বাজো বেণুকা।।
মধুমালতী-বেলা-বনে ঘনাও নেশা;
স্বপন আনো জাগরণে মদিরা মেশা।
মন যবে রহে না ঘরে
বিরহ-লোকে সে বিহরে,
যবে নিরাশার বালুচরে
ওড়ে বালুকা।
বাজো বেণুকা, বাজো বেণুকা।।

————-
মধুমাধবী সারং / ত্রিতাল

 

ধুলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে

 

ধুলি-পিঙ্গল জটাজুট মেলে-
আমার প্রলয়-সুন্দর এলে।।
পথে পথে ঝরা- কুসুম ছড়ায়ে,
রিক্ত শাখায় কিশলয় জড়ায়ে,
গৈরিক উত্তরী গগনে উড়ায়ে-
রুদ্ধ-ভবনের দুয়ার ঠেলে।।
বৈশাখী পূর্নিমা চাঁদের তিলক
তোমারে পরাব,
মোর অঞ্চল দিয়া তব জটা নিঙাড়িয়া
সুরধুনি ঝরাব।
যে মালা নিলেনা আমার ফাগুনে,
জ্বালাব তারে তব রূপের আগুনে,
মরণ দিয়া তব চরণ জড়াব
হে মোর উদাসীন, যেওনা ফেলে।।

————
শুদ্ধ সারং / ত্রিতাল



নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে

 

নিশি নিঝুম ঘুম নাহি আসে,
হে প্রিয়, কোথা তুমি দূর প্রবাসে।।
বিহগী ঘুমায় বিহগ-কোলে,
শুকায়েছে ফুল-মালা শ্রান্ত আঁচলে।
ঢুলিছে রাতের তারা চাঁদের পাশে।।
ফুরায় দিনের কাজ ফুরায় না রাতি,
শিয়রের দীপ হায়, অভিমানে নিভে যায়
নিভিতে চাহে না নয়নের বাতি।
কহিতে নারি কথা তুলিয়া আঁখি
বিষাদ-মাখা মুখ গুন্ঠনে ঢাকি।
দিন যায় দিন গুণে নিশি যায় নিরাশে।।

————–
বেহাগ / ত্রিতাল

 

0 comments:

Post a Comment

  ©Template by Dicas Blogger.